• ঢাকা
  • |
  • সোমবার ২৮শে আশ্বিন ১৪৩২ দুপুর ০১:২১:২৯ (13-Oct-2025)
  • - ৩৩° সে:
সংবাদ ছবি

দেশের রাজনীতি হোক প্রতিযোগিতামূলক কিন্তু তা যেন হয় নীতিনিষ্ঠ ও ভদ্রতার সীমার মধ্যে

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিবিসি বাংলাকে একটি দীর্ঘ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। এতে তিনি বর্তমান রাজনৈতিক ইস্যু, নির্বাচন ও ভবিষ্যতের রাজনীতি নিয়ে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকারে তিনি প্রতিপক্ষ কোনো রাজনৈনিতক দলকে সরাসরি কোনো আক্রমণ করেননি, বরং রাজনীতিতে ইতিবাচক ও গঠনমূলক ধারা চালুর বার্তা দিয়েছেন।৬ অক্টোবর সোমবার সকালে সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করে বিবিসি বাংলা। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমটির বাংলা বিভাগের সম্পাদক মীর সাব্বির ও সিনিয়র সাংবাদিক কাদির কল্লোলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তারেক রহমান দ্রুতই দেশে ফিরবেন বলে জানিয়েছেন।সেখানে তারেক রহমান বলেন, ‘আমরা চাই, দেশের রাজনীতি হোক প্রতিযোগিতামূলক কিন্তু তা যেন হয় নীতিনিষ্ঠ ও ভদ্রতার সীমার মধ্যে।’তিনি যোগ করেন, ‘জনগণের আস্থা ফিরে পেতে হলে রাজনীতিতে ঘৃণা নয়, সহযোগিতা ও দেশপ্রেমকে প্রাধান্য দিতে হবে।’প্রধানমন্ত্রী পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন কি না– এমন প্রশ্নের উত্তরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘সে সিদ্ধান্ত একাই আমার নয়, এটি নির্ভর করবে দল ও দেশের জনগণের ওপর।’দেশে ফেরার বিষয়ে তিনি জানান, যদিও বর্তমানে শারীরিকভাবে যুক্তরাজ্যে আছেন, মন-মানসিকতায় তিনি দীর্ঘ ১৭ বছর ধরেই বাংলাদেশে রয়েছেন। বলেন, ‘দ্রুতই দেশে ফিরব, ইনশাআল্লাহ।’নির্বাচনে সক্রিয় অংশগ্রহণ সম্পর্কে কথা বলার সময় তারেক রহমান উল্লেখ করেন, ‘নির্বাচনের সঙ্গে আমার ওতপ্রোত সম্পর্ক; জনগণের প্রত্যাশিত অংশগ্রহণ থাকলে আমাকে সেখানে থাকতে হবে।’জুলাই আন্দোলনে ‘মাস্টারমাইন্ড’ তকমা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমি নিজেকে এই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড হিসেবে দেখি না। জুলাই-অগাস্টের সফল আন্দোলনের প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে বহু বছর আগে থেকে। এই আন্দোলনে শুধু বিএনপি নয়, সব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, সাধারণ মানুষ, ছাত্র, শ্রমিক, কৃষক, গৃহিণী, এমনকি অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা ও সাংবাদিকরাও অংশ নিয়েছেন। দল-মত নির্বিশেষে সবার অবদানেই এই আন্দোলন সফল হয়েছে।’রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সাক্ষাৎকারে দেখা গেছে তারেক রহমান রাজনৈতিক আলাপ চালাতে চান যে পথে সেটি ‘নেতিবাচক আক্রমণ’ নয়, বরং সম্মিলিত আলোচনার পথ। প্রতিপক্ষকে সরাসরি টার্গেট করার পরিবর্তে তিনি বার্তা দিচ্ছেন যে, দলের ভাবমূর্তি ও জনসংযোগকে গুরুত্ব দেওয়া দরকার।তারা আরও বলছেন, এটি একটি কৌশলী দৃষ্টিভঙ্গি। বিরোধিতায় প্রবল উত্তেজনা না বাড়িয়ে, ইতিবাচকভাবে আলোচনা ও প্রস্তাবের দিকেই মনোযোগ আকর্ষণ করেছেন। বিশেষ করে ভোটার-মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইলে এ ধরনের সুর একটি নতুন রাজনৈতিক রূপ দিতে পারে।তারেক রহমানের এ বক্তব্য বিএনপির জন্য নতুন দিকনির্দেশনা হতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, নেতিবাচক ভাষা পরিহার করে ইতিবাচক রাজনীতির বার্তা তরুণ ভোটারদের আকৃষ্ট করতে সাহায্য করবে।একজন বিশ্লেষক বলেন, ‘তারেক রহমানের এই টোন আসলে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি। এটি দেখায় যে বিএনপি এখন সংঘাত নয়, সংলাপ চায়।’ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, গত ১৬ বছর আমরা যে প্রতিহিংসার রাজনৈতিক সংস্কৃতি দেখেছি, সেই পুরোনো ধারার রাজনীতি, হিংসার রাজনীতি এখন চলবে না, এটা বিএনপি বুঝতে পেরেছে। যার কারণে অনেকগুলো বিষয়ে তারা অন্যদের থেকে এগিয়ে ছিল। যেমন বিএনপি সবার আগে সংস্কারের কথা বলেছে।তিনি আরও বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আজ এই সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে পরিষ্কার করে বলেছেন যে, আজ রাজনৈতিক ভেদাভেদ, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার যে সংস্কৃতি সেখান থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। আমাদের রাজনীতিবিদদের দুর্নীতি, চুরি এবং নানা অপকর্মের কারণে ক্ষমতা থেকে যাওয়ার পরে জেলে যেতে হয়, নিরাপত্তাহীনতায় থাকতে হয়। এগুলো তাদের কর্মের ফল। কিন্তু তারেক রহমান বলেছেন, জনগণই সবচেয়ে বড় বিচারক। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন তিনি।এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, গত এক বছর আমরা জুলাই আন্দোলনের ‘মাস্টারমাইন্ড’ নিয়ে অনেক কথা শুনে আসছি। সেই ইস্যুতে তারেক রহমান বলেছেন, ‘মাস্টারমাইন্ড’ তো কোনো ব্যক্তি হতে পারেন না। জুলাই আন্দোলনে ব্যক্তি ছিল না আসলে। ৫ আগস্টের আগে কোনো ব্যক্তির কারণে উদ্বুদ্ধ হয়ে মানুষ আন্দোলনে গিয়েছে? আওয়ামী লীগের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ২০২৪ সালে আন্দোলন করেছে। সুতরাং তারেক রহমান বলেছেন, মানুষই মাস্টারমাইন্ড, নাগরিকরাই মাস্টারমাইন্ড। দুটো কথাই গুরুত্বপূর্ণ, জনগণ বিচারক আর মানুষই মাস্টারমাইন্ড।কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে প্রতিহিংসার রাজনীতির পরিবর্তনের জন্য বিএনপির যে আগ্রহ, সেটার প্রতিফলন তারেক রহমানের বক্তব্যে ফুটে উঠেছে। এটা রাজনীতির নতুন মাত্রা বলে আমি মনে করি।বিএনপির মিডিয়া সেলের অন্যতম সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান রাজনীতিতে ইতিবাচক ধারা সৃষ্টি করতে চান। দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে তিনি কোনো পক্ষকে নিয়ে অযথা কটূক্তি করেননি।