• ঢাকা
  • |
  • সোমবার ২৮শে আশ্বিন ১৪৩২ সকাল ০৮:৩৫:৩৩ (13-Oct-2025)
  • - ৩৩° সে:
সংবাদ ছবি

মিথ্যাচার, গুজবের মাধ্যমে বাকৃবির পরিবেশ অস্থিতিশীল করছে ‘ বাকৃবি পরিবার’ পেইজ

বাকৃবি প্রতিনিধি: বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম বর্তমানে প্রযুক্তি নির্ভর। তারা অধিকাংশ সময় ব্যয় করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, যার মধ্যে ফেসবুক অন্যতম। ফেসবুকের মাধ্যমেই তারা খবর জানতে ও বিশ্বাস করতে চায়। কিন্তু যেহেতু ফেসবুক একটি ব্যক্তি কেন্দ্রিক যোগাযোগ মাধ্যম, তাই প্রত্যেকে নিজের মতামত শেয়ার করে থাকে। যা অনেক সময় অন্যের মনে বিভ্রান্তি তৈরি করে। উপরন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া অধিকাংশ তথ্যই হয় বানানো—যাকে বলা হয় গুজব। বর্তমানে ফেসবুক ব্যবহার করে নানা গুজব ছড়িয়ে জনমত উত্তেজিত করে দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চলছে।বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) এ বিষয়ে মুখ্য ভূমিকা পালন করে আসছে ‘BAU Family – বাকৃবি পরিবার’ নামের একটি ফেসবুক পেইজ। এই পেইজের প্রধান কাজ হলো যে কোনো বিষয়কে অতিরঞ্জিত বা বড় করে তুলে ধরা। বিভিন্ন সময় গুজব ছড়িয়ে শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করে এসেছে তারা। অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে পরিচালিত হওয়ায় পেইজটির এডমিনের পরিচয় জানা যায়নি।দীর্ঘ পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, পেইজটির মূল কাজ হলো বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সমালোচনা করা। “কিছু বলতে চান? আমাদের বলুন, আপনার কথা কেউ না শুনলেও আমরা শুনবো”—এমন আহ্বান জানিয়ে তারা ইনবক্সে মানুষের মতামত নেয়। কিন্তু সেই মতামত যাচাই-বাছাই না করেই পেইজে প্রকাশ করা হয়। অধিকাংশ পোস্টই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং কাউকে হেয় করার মতো। মাঝে মাঝে কিছু পোস্ট ডিলিট করে ভুল স্বীকারও করেছে তারা। বিষয়গুলোকে সুন্দরভাবে সাজিয়ে কোনো প্রমাণ ছাড়াই শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী এমনকি আশপাশের সাধারণ মানুষকেও দোষী বানিয়ে ফেলা হয়।সম্প্রতি বাকৃবির আন্দোলন ও হামলার ঘটনাকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের উত্তেজিত ও সহিংস করতে পেইজটির ভূমিকা ছিল প্রধান। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সূত্র জানায়, গত ৩১ আগস্ট পশুপালন ও ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে কম্বাইন্ড ডিগ্রি বাস্তবায়নে জরুরি একাডেমিক কাউন্সিল হয়। সেখানে প্রশাসন শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়ে কম্বাইন্ড ডিগ্রির সিদ্ধান্ত নেয়। তবে পাশাপাশি আগের চলমান পৃথক দুটি ডিগ্রি চালুরও সিদ্ধান্ত হয়, যা শিক্ষার্থীরা মেনে নেয়নি। এর জেরে তারা শিক্ষকদের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন মিলনায়তনে প্রায় ৮ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে বহিরাগতরা হামলা করে শিক্ষকদের বের করে আনে। শিক্ষকদের মারধরের অভিযোগ ওঠে এবং এরপর উপাচার্যের নির্দেশে শিক্ষার্থীদের ওপরও হামলা হয়।এই ঘটনাকে ঘিরে পেইজটি নানা পোস্ট দিয়ে শিক্ষার্থীদের প্ররোচিত করে। ৩১ আগস্ট থেকে প্রকাশিত কিছু উল্লেখযোগ্য পোস্ট হলো:“যদি কিন্তু অথবা ছাড়া কম্বাইন্ডের ঘোষণা আসতে হবে”“বহিরাগত ক্যাম্পাসে কেন, ভিসি তুই জবাব দে”“ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের দিয়ে হামলা চালিয়েছে ভিসি। সবাই আসেন, ছেলেদের বাঁচান”“রক্তাক্ত বাকৃবি” (বাকৃবির লোগো লাল করে পোস্ট করা হয়, যদিও সেদিন তেমন রক্তাক্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়নি)“ভিসির প্রত্যক্ষ মদদে হামলা হয়েছে, ভিসির পদত্যাগ চাই”“৪০ লাখ টাকা দিয়ে ভিসি হয়েছেন, এখন ব্যর্থতার দায় নিয়ে পদত্যাগ করুন”“বিএনপি সমর্থিত ভাইস-চ্যান্সেলর বহিরাগত দলীয় বাহিনী দিয়ে ছাত্রদের ওপর হামলা চালাচ্ছে”“যে ভাইস-চ্যান্সেলর ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না এবং দলীয় লোকজনকে যোগ্যতা বিবেচনা না করেই চাকরিতে নিয়োগ দিচ্ছে, সেই ভিসির পদত্যাগ চাই। দলীয় ভিসির পদত্যাগ চাই।”“চাঁদাবাজির দায়ে বহিষ্কৃত ছাত্রদল নেতা নজরুল, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার হেলাল, ডেপুটি রেজিস্ট্রার গোলাপ ও সাবেক ছাত্রদল নেতা জনির নির্দেশে আজ ক্যাম্পাসে হামলা চালানো হয়েছে। এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার প্রত্যক্ষ মদদ দিয়েছে ভিসি। নজরুল বহিষ্কৃত হওয়ার পরও হেলাল, গোলাপ ও জনির আশ্রয়ে তার অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।”“১৯ তারিখ সিনিয়রদের বিসিএস পরীক্ষা। কেউ হল ত্যাগ করবেন না। কোনো শুয়োরের বাচ্চা হলের ত্রিসীমানায় আসলে জয় বাংলা করে দেবেন।”একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে গালিগালাজ করে লেখা হয়: “এই যে __ছেলে সহকারী প্রক্টর মনির, হাজবেন্ড্রী অনুষদের_।”“আজকের ঘটনার পর কালকে সবাইকে অলরেডি হল ছাড়তে বলা হয়েছে। মেয়েরা সবাই প্রস্তুতি নিচ্ছে হল ছাড়ার জন্য। কিন্তু প্রশ্ন হলো—এই পর্যায়ে হল ছেড়ে যাওয়া কি স্বার্থপরের মতো কাজ না?... আমরা আমাদের ভাইদের ছেড়ে যাব না।”“কেউ হল ছাড়বে না। তাদের উদ্দেশ্য আমাদের ইউনিট ভেঙে দেওয়া... ভাইস ও প্রক্টরের যদি ন্যূনতম লজ্জা থাকে, তারা স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করুন।”“আপনারা কি হল ছাড়ে চলেছেন? অনেক সোর্স থেকে শুনেছি, অনেকেই চলে গেছেন। চবি থেকে কিছু শিখুন, আপু। নিজেরা নিজেদের পাশে দাঁড়ান।”“ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষকরা মারা গেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন... নিজেদের স্বার্থ উপেক্ষা করে ছাত্রদের সঙ্গে আপনাদের থাকার প্রয়োজন ছিল, কিন্তু থাকলেন না। এই লজ্জা আজীবন মনে থাকবে।ভেটেরিনারি অনুষদকে এই আন্দোলনে দায়িত্বরত রাখার দায়িত্বে থাকা কয়েকজন শিক্ষক প্রতিবাদ করতে ব্যর্থ হয়েছেন... প্রক্টর মহোদয়ও হামলায় বাধা দিতে ব্যর্থ হন। যদি যথাযথ প্রতিবাদ না আসে, আমরা কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেব। এছাড়াও তদন্ত কমিটির সদস্যদের নিয়ে হেয় মন্তব্য করা, শিক্ষকদের দোষী বানানো, ছাত্রদল নেতাদের বাজেভাবে উপস্থাপন করাও পেইজটির নিয়মিত কর্মকাণ্ডের মধ্যে পড়ে। আবার আন্দোলনের এক পর্যায়ে হঠাৎ দোষারোপ বন্ধ করে দ্রুত সমাধান চেয়ে ক্লাস-পরীক্ষা চালুর আহ্বান জানায়। কৃষি অনুষদের ৪র্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, সবকিছুই তারা নিজেদের মতো সাজিয়ে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করে শিক্ষার্থীদের প্ররোচিত করেছে। আন্দোলন-পরবর্তী বাজে পরিস্থিতি বাস্তবায়ন, ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের অবমাননা এবং শিক্ষার্থীদের চোখে শিক্ষকদের ভিলেন হিসেবে উপস্থাপন—এসবের মূলে ছিল এই পেইজ।তিনি আরও বলেন, পেইজে যা তুলে ধরা হয় তার কোনো বাস্তবতা নেই, সবই মনগড়া। অনেকেই একে নিউজ মিডিয়া ভেবে ভুল করেন। এই পেইজের মাধ্যমে বাকৃবির সুস্থ পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে।এ বিষয়ে বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া বলেন, ইতোমধ্যে আমরা ওই পেইজসহ বেশকিছু গ্রুপের বিরুদ্ধে থানায় জিডি করেছি। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি।