নোয়াখালী প্রতিনিধি: বিয়ের সাজে সাজানো পুরো বাড়ি। চলছে কনের বাড়িতে রান্নাবান্না ও অতিথি আপ্যায়ন। এমনকি গাড়িবহর নিয়ে হাজির হয়েছে বরযাত্রী। এমতাবস্থায় বসে আছেন কাজী, তবে যদি না প্রিয় বন্ধু আসে কবুল বলবেন না বর, এ নিয়ে হৈচৈ শুরু হয়ে যায়।
১৪ অক্টোবর মঙ্গলবার দুপুরে এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার তমরদ্দি ইউনিয়নের ক্ষিরোদিয়া গ্রামে। পরে এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে ভাইরাল হয়।
আলতাফ হোসেন নামে কনেপক্ষের এক আত্মীয় বলেন, ১২টা থেকে আমরা এলাকার লোকজনকে খাওয়ানো শুরু করি। বর এসেছে দেড়টার দিকে। বরের এক বন্ধুর জন্য প্রায় দুই ঘণ্টা আমরা অপেক্ষা করেও বিয়ের কাজ শুরু করতে পারিনি। অনেক গ্রামবাসী রাগ করে চলে গেছেন। পরে তাকে আনার পর বিয়ের কাজ সম্পন্ন হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার সোনাদিয়া ইউনিয়নের মাইজচরা গ্রামের করিম বেপারির ছেলে আরমানের বিয়ে ঠিক হয় তমরদ্দি ইউনিয়নের ক্ষিরোদিয়া গ্রামে। দুপুরের আগে বরযাত্রী রওনা হওয়ার সময় বরের এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সঙ্গে গাড়িতে বসা নিয়ে মনোমালিন্য হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে বন্ধু বিয়েতে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন ওই বন্ধু। বরযাত্রী কনের বাড়িতে পৌঁছার পর বর সেই বন্ধুকে না দেখে গাড়ি থেকে নামতেই অস্বীকৃতি জানায়।
পরিবারের সদস্যরা, আত্মীয়স্বজন ও গ্রামবাসী অনেক অনুরোধ করে বিয়ের আসরে গেলেও বিয়েতে তাকে রাজি করাতে পারেননি। বর স্পষ্ট জানিয়ে দেন বন্ধু না আসলে সে কবুল বলব না। প্রায় দুই ঘণ্টা পর বরপক্ষের লোকজন বন্ধুকে গিয়ে নিয়ে আসেন।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল মান্নান রানা বলেন, দারুণ এক বন্ধুত্বের বন্ধন দেখলাম আজ। এমন আজব, আবার হৃদয়ছোঁয়া এক বিয়ের অনুষ্ঠান জীবনে প্রথম দেখলাম। আমি ছিলাম অতিথি- ভাবিনি বন্ধুর অনুপস্থিতিতে বর কবুল বলা থেকে বিরত থাকবে। কিন্তু সে স্পষ্ট জানিয়ে দিল, প্রিয় বন্ধুকে ছাড়া জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত বিয়ের পিঁড়িতে বসবে না। শেষ পর্যন্ত সবাই নিরুপায় হয়ে বন্ধুকে ডেকে আনে, আর তার উপস্থিতিতেই সম্পন্ন হয় বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা। সত্যিই এমন বন্ধুত্ব আজকাল খুব বিরল।
কনের মামা সেলিম হোসেন বলেন, এমন ঘটনা জীবনে দেখিনি। সবাই দাওয়াত খেয়ে অপেক্ষা করছে, কাজি সাহেব বসে আছেন, কিন্তু বর কবুল বলছে না। আমরা ভেবেছিলাম হয়তো কোনো ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। পরে শুনলাম বন্ধুর জন্য বসে আছে। শেষমেশ সেই বন্ধুই আসায় বিয়ে সম্পন্ন হলো।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বর আরমান হোসেন বলেন, রিয়াজ আমার ছোটবেলার বন্ধু। আমার এক আত্মীয়ের সাথে গাড়িতে বসা নিয়ে রাগ করে বিয়েতে আসেনি। আমার শুভ কাজে সে থাকবে না এটা আমি মানতে পারিনি। তাই সে আসার পর আমি বিয়ে করেছি।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available